Soiad Mahedi

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) - মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ



হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম): মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ও সর্বশেষ নবী। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল, যাঁর মাধ্যমে পূর্ণতা পায় নবুওয়তের ধারা। তাঁর জীবন, চরিত্র এবং দাওয়াহ বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ হয়ে আছে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। জন্মের আগেই পিতার মৃত্যু হয়। ছয় বছর বয়সে মাতাও মারা যান। এরপর তাঁকে দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং পরে চাচা আবু তালিব লালন-পালন করেন।

তারুণ্যকাল ও সততা

তরুণ বয়স থেকেই মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যে সততা, বিশ্বস্ততা এবং ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হতো। তিনি “আল-আমিন” নামে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যার অর্থ— “বিশ্বস্ত”। ব্যবসায়ে তিনি কখনো প্রতারণা করেননি এবং সর্বদা ন্যায়নীতি মেনে চলেছেন।

বিয়ে ও পারিবারিক জীবন

২৫ বছর বয়সে তিনি ধনী ও সম্মানিত এক মহিলা খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সহায় ছিলেন এবং ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম নারী ছিলেন।

ওহি প্রাপ্তি ও নবুওয়ত

৪০ বছর বয়সে তিনি হিরা গুহায় ধ্যানেরত অবস্থায় প্রথম ওহি লাভ করেন। তখন জিবরাঈল (আ.) তাঁর কাছে এসে বলেন—
"اقْرَأْ" (পড়ো)।
এইভাবেই শুরু হয় কুরআনের প্রথম ওহি এবং তাঁর নবুওয়তের যাত্রা।

দাওয়াত ও কষ্টের সময়কাল

নবুওয়তের পর মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে এক আল্লাহর পথে আহ্বান করতে থাকেন। মক্কার কাফিররা তাঁর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালায়— তাঁর অনুসারীদের হত্যা, বয়কট, পাথর মারা, অপমান করা, এমনকি হত্যার ষড়যন্ত্র করাও বাদ দেয়নি। তবুও তিনি কখনো প্রতিশোধ নেননি বরং ধৈর্য ধারণ করে ইসলাম প্রচার চালিয়ে গেছেন।

হিজরত ও মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা

৭২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানেই মুসলিম সমাজ গঠিত হয় এবং ইসলাম একটি রাষ্ট্রীয় ভিত্তি লাভ করে। মদিনায় তিনি সকল ধর্মের মানুষদের সঙ্গে চুক্তি করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তোলেন।

মহান নেতা ও সেনাপতি

তিনি শুধু ধর্মীয় নেতা নন, ছিলেন একজন মহান রাষ্ট্রনায়ক, সমাজ সংস্কারক ও কৌশলী সেনাপতি। বদর, উহুদ, খন্দকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিবারই তিনি সাহস, কৌশল ও দয়া প্রদর্শন করেন।

ফতেহ মক্কা: ক্ষমার অনন্য নজির

মক্কা বিজয়ের সময় তিনি তাঁর দীর্ঘকালীন নির্যাতনকারীদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন। বলেন—
"আজ তোমাদের জন্য কোনো ভর্ৎসনা নেই, তোমরা সবাই মুক্ত।"
এই মহানুভবতা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত।

বিদায় হজ ও মৃত্যুবরণ

১০ হিজরিতে তিনি বিদায় হজ আদায় করেন এবং আরাফার ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে মানবাধিকার, নারী অধিকার, সবার রক্ত ও সম্মানের নিরাপত্তা, সুদ নিষিদ্ধকরণসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি ঘোষণা করেন।

৬৩ বছর বয়সে ১১ হিজরি, রবিউল আউয়াল মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মদিনার মসজিদে নববিতে দাফন করা হয়।


শেষ কথা

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন এক সম্পূর্ণ জীবন। তিনি ছিলেন আদর্শ পিতা, দয়ালু স্বামী, বিচক্ষণ নেতা এবং সেরা শিক্ষক। তাঁর প্রতিটি দিক মানবতার জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কুরআনের ভাষায়—
"আর নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী।" 

(সূরা কলম, ৪)

সূত্রসমূহ

  • কুরআনুল কারিম
  • সহীহ বুখারী ও মুসলিম
  • সীরাতুন্নবী (ইবনে হিশাম, ইবনে কাসীর প্রমুখ)


Blog Writer: Soiad Mahedi