ষাট গম্বুজ মসজিদ - Shat Gombuj Masjid
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহাসিক শহর বাগেরহাটে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ (Sixty Dome Mosque), যা স্থানীয়ভাবে "ষাট গম্বুজ মসজিদ" নামে পরিচিত, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাত ইসলামি স্থাপত্য নিদর্শন। এই মসজিদ শুধু বাংলাদেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামি স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।
📍 অবস্থান ও প্রেক্ষাপট
ষাট গম্বুজ মসজিদটি অবস্থিত:
📍 বাগেরহাট জেলা, খুলনা বিভাগের অন্তর্গত।
এটি বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে তালারোড নামক এলাকায় অবস্থিত।
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এই মসজিদটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
---
🏛️ ইতিহাস
খান জাহান আলীর প্রতিষ্ঠা:ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাতা হলেন খান-ই-আজম উলুঘ খান জাহান আলী।
তিনি ছিলেন তুর্কি বা পারস্য থেকে আগত এক মুসলিম সাধক ও সেনানায়ক, যিনি ১৫শ শতকে (প্রায় ১৪৪০ সালের দিকে) এই অঞ্চল শাসন ও ইসলাম প্রচার করতেন।
বাগেরহাট ছিল সেই সময় খলিফাত-ই-আব্বাসিয়া এর অধীন এক ইসলামি জনপদ এবং শহরটির পুরনো নাম ছিল "খলিফাতাবাদ"।
---
🧱 স্থাপত্য রীতি ও গঠন
গম্বুজ সংখ্যা:
যদিও মসজিদটির নাম "ষাট গম্বুজ", প্রকৃতপক্ষে এখানে রয়েছে ৮১টি গম্বুজ (৭৭টি প্রধান ও ৪টি কোণায় মিনারসহ)।
গম্বুজগুলির বিন্যাস ১১টি সারি ও ৭টি কলামে ভাগ করা, অর্থাৎ ১১x৭ = ৭৭টি গম্বুজ।
আয়তন:
মসজিদটির বাহ্যিক পরিমাপ প্রায় ৪৯.৫ মিটার x ৩২.৫ মিটার।
দেয়ালগুলির পুরুত্ব প্রায় ২-২.৫ মিটার যা স্থাপনার মজবুত কাঠামোর প্রমাণ বহন করে।
স্তম্ভ ও খিলান:
মসজিদের ছাদকে ধারণ করে আছে ৬০টি পাথরের স্তম্ভ, যা থেকে ‘ষাট গম্বুজ’ নামটির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এই স্তম্ভগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে অনন্য খিলান এবং গম্বুজ।
মিনার ও প্রবেশপথ:
চার কোণায় রয়েছে ৪টি মিনার, যেগুলোর মাথায়ও ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে।
পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে ৭টি প্রবেশদ্বার, আর উত্তর ও দক্ষিণে ৩টি করে দরজা আছে, যা বাতাস চলাচলে সহায়ক।
---
🎨 শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য
এই মসজিদের নকশায় তুর্কি, পারস্য ও বাংলার স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণ দেখা যায়।
দেয়ালে এবং স্তম্ভে রয়েছে চুন-সুরকির নিখুঁত কাজ ও অলংকরণ।
মসজিদের অভ্যন্তরে কোনো মিনবার বা মেহরাবের পেছনে শিলালিপি নেই, যা এটি আরও রহস্যময় করে তোলে।
---
🕌 ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
এটি একসময় শুধু জুমার নামাজের স্থান নয়, ছিল প্রশাসনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র।
বর্তমানে এটি শুধুমাত্র একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়, বরং নিয়মিত নামাজের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
প্রতি বছর এখানে হাজার হাজার মুসল্লি ও পর্যটক আসেন বিশেষত ইসলামি ইতিহাস জানার জন্য।
বর্তমানে এটি শুধুমাত্র একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়, বরং নিয়মিত নামাজের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
প্রতি বছর এখানে হাজার হাজার মুসল্লি ও পর্যটক আসেন বিশেষত ইসলামি ইতিহাস জানার জন্য।
---
📜 ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি
১৯৮৫ সালে UNESCO ষাট গম্বুজ মসজিদ সহ পুরো প্রাচীন খলিফাতাবাদ নগরীকে World Heritage Site ঘোষণা করে।এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ইসলামি স্থাপত্য ও ইতিহাস গুরুত্ব লাভ করে।
---
🧭 ভ্রমণ তথ্য
বাগেরহাট পৌঁছাতে ঢাকা থেকে সড়কপথে বাস বা ট্রেনযোগে খুলনা, এরপর স্থানীয় পরিবহনে বাগেরহাট যাওয়া যায়।কাছাকাছি থাকার জন্য হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে।
দর্শনার্থীদের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মসজিদ খোলা থাকে।
---
Join the conversation